আপনি যখন সি-সেকশানের বিষয়ে ভাবেন, তখন এই পদ্ধতিকে আপনার অস্বাভাবিক, ভীতিপ্রদ ও ক্ষতিকারক মনে হয়। কিন্তু এরকম কিছু ভয়ংকর ভুল ধারণা আছে এই বিষয়ে, যা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। আজ এর কয়েকটিকে শোধরানো যাক।
১. স্তন্যপান আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে
আপনি বাচ্চাকে নিজস্ব অভিমত অনুসারে পুষ্টিদান করবেন, কিন্তু তাকে স্তন্যপান করাতে চাইলে তেমন কোন অসুবিধে হবে না, সে তার জন্ম স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই হোক, বা সি-সেকশান পদ্ধিতে। এটা ঠিক যে সি-সেকশান পদ্ধতিতে জন্ম প্রদান করলে স্তন্যপান শুরু করতে একটু অসুবিধা হয়, কিন্তু তা অসম্ভব একেবারেই নয়। যে কোন রকমের প্রসব পদ্ধতিতেই তিন এবং চব্বিশ মাসের মধ্যে স্তন্যপানের হার এক রকম থাকে, এবং এটা জন্ম পদ্ধতির দ্বারা প্রভাবিত হয় না। একমাত্র সমস্যা হল যে সি-সেকশানের ক্ষত থেকে হওয়া যন্ত্রণার জন্য আপনাকে শিশুটিকে অন্যভাবে ধরতে হতে পারে, বা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে তাকে স্তন্যপান করানোর নতুন ভঙ্গিমা বার করতে হতে পারে।
২. সি-সেকশানের পর স্বাভাবিক জন্মদান সম্ভব নয়
আপনাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন বিশ্বাস করেন যে একবার সি-সেকশান হওয়ার পর আর ফিরে যাওয়ার উপায় থাকে না। কিন্তু সি-সেকশান হওয়ার পরেও যেকোনো মায়ের পক্ষে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক জন্মদান করতে পারার একটা বড় সম্ভাবনা থাকে। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে ৬০% থেকে ৮০% মহিলাদের এই পদ্ধতির পরেও স্বাভাবিক জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা থাকে। সিজারিয়ানের পরে টল্যাক (TOLAC) নামক এক ট্রায়াল পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার পক্ষে আর স্বাভাবিক জন্মদান (যাকে VBAC বলে) সম্ভব হবে কিনা।
৩. স্বাভাবিক জন্মদান এবং সি-সেকশান, দুটির ক্ষেত্রেই আরোগ্য লাভ করতে একই সময় লাগে
এটা মনে হতে পারে যে সব রকমের প্রসব পদ্ধতিতেই আরোগ্য লাভের সময় এক, কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্যি নয়। স্বাভাবিক জন্ম পদ্ধতির পর সেরে উঠতে এক থেকে দুই সপ্তাহ লাগে ও প্রসবের পরে এক কি দুই দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। কিন্তু সি-সেকশানের ক্ষেত্রে তিন কি চার সপ্তাহ সময় লাগে সুস্থ হতে, এবং চার কি পাঁচ দিন হাসপাতালে থাকতে হয় প্রসবের পর। তাছাড়া, সি-সেকশান হয়ে থাকলে আরও অনেক বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়, যেমন কঠোর ব্যায়াম না করা, যৌন মিলন থেকে দূরে থাকা, ভারী জিনিস না তোলা, ইত্যাদি।
৪. সাধারন জন্ম পদ্ধতির চেয়ে সি-সেকশান পদ্ধতিতে ঝামেলা কম হয়
সি-সেকশান শুধু এমন ক্ষেত্রে করা হয় যখন ঝুঁকি খুব বেশী, বা যেখানে প্রসবের সময় জটিলতার সম্ভাবনা আছে। বেশির ভাগ ডাক্তার স্বাভাবিক পদ্ধতি সুপারিশ করেন, এবং শুধু প্রয়োজন হলেই সি-সেকশান করানোর উপদেশ দেন। এটা খুবই সুন্দর ব্যাপার যে আপনি সন্তানজন্মের তারিখ ঠিক করতে পারছেন, কিন্তু শেষমেশ ঐচ্ছিক সি-সেকশান হল একটি বিশাল অপারেশান যা আপনি ধৈর্য ধরে এড়িয়ে চলতে পারেন। পেটের অন্য যেকোনো অস্ত্রোপচারের মতো সি-সেকশানেও প্রচুর ঝুঁকি আছে, যেমন অত্যধিক রক্তক্ষরণ, বা সংক্রমণ, যেগুলো এড়িয়ে চলাই ভাল। স্বাভাবিক জন্ম হয়ত অতটা পরিকল্পিত ভাবে হয়না, কিন্তু সি-সেকশানের ঝুঁকি গুলো মাথায় রাখলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।